রাজশাহীতে অজ্ঞাত ভাইরাসে দুই বোনের মৃত্যু, মা-বাবাও হাসপাতালে

শেয়ার করুন

বিস্তারিত দেখুন নিচের ভিডিও লিংকে সেলিম উদ্দীনের প্রতিবেদনে…

রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালে রাখা হয়েছে। শিশু দুটির নাম মুনতাহা মারিশা ও মুফতাউল মাশিয়া।

শিশু দুইটির বাবা রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক মনজুর রহমান (৩৫)। মা গৃহীনি পলি খাতুন (৩০)। তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তারা রাজশাহীর ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন। কলেজ প্রাঙ্গনে পড়ে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন গৃহকর্মী। না ধুয়েই এই বরই খেয়েছিল দুই বোন।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) গতকাল শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকেরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। আর গতকাল বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে ছোট বোন মারিশার পাশে মাশিয়ার দাফন করা হয়েছে।

হাসপাতালের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি মনজুর রহমান ও তার স্ত্রী পলি খাতুন জানান, গত মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে গৃহকর্মী কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে। পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে নিয়ে তারা একটি মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। সিএমএইচে নেওয়ার পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, পেথ মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে। এরপর গ্রামের বাড়ি দুর্গাপুরে নিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়।

এরপর শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। পরদিন শনিবার বিকালে মাশিয়াও মারা যায়। ছোট মেয়ে মারিশা মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠতে শুরু করে। আর মাশিয়ার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ তিনি আগে কখনও দেখেননি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুই বোনই বার বার পানি খাচ্ছিল।

হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, ‘ধারণা করা হচ্ছে বাচ্চা দুইটা নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট হবে। তখন জানতে পারব।’