পুরোনো সেই খেলার কথা

শেয়ার করুন

রাস্তায় কুড়িয়ে পাওয়া সিগারেটের প্যাকেট কেটে হতো তাস। তার মূল্যও ধার্য হতো কোনোটা দশ, কোনোটা এক শ, বা এক হাজার। একটি নির্দিষ্ট জায়গা থেকে টালি ভেঙে তৈরি বাট্টুল ছোড়া হতো। যে প্রথমে ছুড়ত সে বাজি ধরত। অন্যজন তার বাট্টুল ছুড়ে তার কাছে এক বিদ্যার মাপে পৌঁছালে জয়ী হতো অন্যথায় পরাজিত হয়ে বাজি হারত। অরেকটি খেলা ছিল সতলিয়া। পরিত্যক্ত টালি জড়ো করে ছোট ছোট করে ভেঙে সাতটি ঘুঁটি তৈরি করা হতো। তারপর নিচ থেকে ওপরে পরপর সাজানো হতো। একজন টিপ করে ছুড়ে মারবে বল। বল লেগে টালি এলোমেলো। সেই ছিটকে যাওয়া বল একদল কুড়িয়ে আনতে যাওয়ার আগে অন্য দল যদি টালিগুলো একই রকম সাজিয়ে ফেলতে পারে তা হলে ভালো। নয়তো ছুড়ে মারা বল যদি অন্য দলের কোনো খেলোয়াড়ের গায়ে লাগে সে দল হবে আউট।

গ্রামবাংলায় এখনো আচমকা দেখা যায়, মস্ত ফ্ল্যাটগুলো যখন আকাশ ঢেকে দেয়নি। ডালপালা নিয়ে গাছগুলো যখন পাড়াজুড়ে থাকত…শীতকালে মফস্বলে চোরকাঁটা আর পাঁচিল ঘেঁষে কাঁটাফল তখনো হতো.. খেলা ছিল অনেক রকম ইকরি-মিকরি, ডাংগুলি, বউ-বাসন্তী, কানামাছি, চোর–পুলিশ, এলাটিং-বেলাটিং, কিতকিত, ধাপসা, ঝালঝাপাটি প্রভৃতি। মেয়েদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছিল কিতকিতের একটু পরিশীলিত ভার্সন ‘লেম্যান’—এক পায়ে ধাওয়া করে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে অন্যজনকে আউট করতে হবে। পরবর্তীকালে সংসারে শাশুড়ি, ননদ-জায়ের মধ্যে যে খেলা ধারাবাহিক। এলাটিং-বেলাটিং শৈল/ কিসের খবর আইল/ রাজামশাই, রাজামশাই একটি বালিকা চাইল—রাজামশাইয়ের ডাকে বালিকারা নিরাপদেই থাকত। সেসব খেলায় শহরের আনাচকানাচে ভরে যেত। লুকিয়ে থাকা জিনিস খুঁজতে হতো। লুকিয়ে রাখা জিনিসের কাছে গেলে শুনতে হতো গরম আর দূরে গেলে ঠান্ডা। সেসব খেলোয়াড় মেয়েরা এখন পাস বই বা ছেলের মার্কশিট গুছিয়ে রাখেন। বর্ষায় অনবরত বৃষ্টির মধ্যে চলত ফুটবল। নিজেকে ম্যারাডোনা বা প্লাতিনি ভেবে চলত দাপাদাপি। মনে আছে ’৮৬ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ফাইনালের মহড়া। জার্মানি–আর্জেন্টিনায় ভাগ হয়েছিলাম দুই দলে। যেন ফাইনালের আগেই ফাইনাল।